SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

আঙ্গুর চাষাবাদ ফলের মধ্যে আঙ্গুর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। আঙ্গুর সুপাচ্য, পুষ্টিকর ও তৃপ্তিদায়ক। এর উৎপাদন বিশ্ব ফল উৎপাদনের অর্ধেক। আর পৃথিবীর প্রচীনতম ফলসমূহের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের মানুষের নিকট আঙ্গুর কোন নতুন ফল নয় । বরং এদেশের সবার কাছে সুপরিচিত ও সমাদৃত । বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সীমিত আকারে আঙ্গুর চাষ হচ্ছে। কিন্তু এগুলো গুনে ও মানে উন্নত মানের নয়। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক উষ্ণ মন্ডলে উৎকৃষ্ট মানের আঙ্গুর চাষ হচ্ছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশেও উৎকৃষ্ট মানের আঙ্গুর চাষের সম্ভবনা আছে। তথ্য মতে বর্তমানে বাংলাদেশে দুটি জাতের আঙ্গুর চাষ শুরু হয়েছে। একটি জাককাট জাতের অন্যটি হলো বাকরুবী বা কালো আঙ্গুর। এ দুটি জাতের আঙ্গুরেই বীজ থাকে। জ্যাককাউ জাতের আঙ্গুর সম্পূর্ণ না পাকলে টক মিষ্টি স্বাদের । কিন্তু কালো আঙ্গুর খেতে বেশ ভালো । বাক রুবী জাতের আঙ্গুর বাংলাদেশে বছরে দু'বার ফল দেয়। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি বাড়িতে যেখানে বৃষ্টির পানি দাড়ানো এমন জায়গায় খুব অল্প পরিশ্রমে ও কম খরচে কালো আঙ্গুর গাছ লাগিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে আর্থিক দিক দিয়ে প্রচুর লাভবান হতে পারেন ।

মাটি ও জমি নির্বাচন

উর্বর দো আশ ও বেলে দোঁআশ মাটি ও রৌদ্রযুক্ত খোলা মেলা জায়গা আঙ্গর চাষের জন্য উপযুক্ত । আড্ডর গাছ যে কোন মাটিতে হতে পারে, তবে উঁচু পানি সুনিষ্কাশিত ব্যবস্থাযুক্ত উর্বর বেলে দোঁআশ মাটি সবচেয়ে উত্তম । আঙ্গুর কিছুটা লবণাক্ততা ও ক্ষারত্ব সহ্য করতে পারে কিন্তু অতিরিক্ত চুন ক্ষতিকর । বেলে কাকুরে মাটিতেও আচ্ছর ফল ভালো হয় ।

চারা রোপণের জন্য জমি ও গর্ত তৈরি পদ্ধতি এবং সার প্রয়োগ কৌশল

রৌদ্র উজ্জল খোলামেলা আলো বাতাস যুক্ত জায়গা আঙ্গর চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে । চারা রোপণের আগে জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে অসমতল জমি সমতল করতে হবে । জমির ক্ষয়রোধের জন্য উপযুক্ত বাঁধের ব্যবস্থা করতে হবে । জমি প্রস্তুত হলে চারা লাগানোর জায়গা গুলো ৭৫ সে:মি: × ৭৫ সে:মি: × ৭৫ সে:মি: মাপের গর্ত খুড়ে প্রতি গর্তে ৫০ কেজি খামার জাত সার মাটির সাথে মিশিয়ে গর্তগুলো ভরাট করতে হবে । চারা রোপণের কমপক্ষে তিন সপ্তাহ পূর্বে গর্ত খনন করা উচিত। চারা রোপণের সময় গর্তের মাটির সাথে ১২৫ গ্রাম করে টি এসপি ও এমপি সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। বর্গাকার পদ্ধতিতে ৪×৪ মি: দূরত্বে গর্ত খনন করতে হবে।

চারা রোপন (Method of Planting )

সমতল জমিতে বর্গাকার বা আয়তকার পদ্ধতিতে এবং পাহাড়ি এলকার জমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে কলমের চারা রোপণ করা হয় । গর্ত তৈরির ২০-২৫ দিন পর চারা রোপণ করতে হয় । প্রতি গর্তে ২-৩ টি করে আঙ্গুরের কাটিং বসানো হয় । পরে তেজী চারটি রেখে বাকি চারাগুলো তুলে ফেলতে হয়। এক বছর বয়স্ক চারার ৪টি মুকুল রেখে বাকি অংশ ঘেঁটে দেওয়া হয় এবং এই রকম চারাগুলোকে গোড়ার মূলসহ তুলে নিয়ে প্রতি গর্তের ঠিক মাঝখানে সামান্য মাটি সরিয়ে একটি চারা সোজাভাবে বসানো হয় । চারাগুলো বসানোর পর গাছের পাড়ায় মাটি ধরিয়ে সামান্য চাপ দিতে হবে । এবং প্রত্যেক গাছে হালকা ভাবে সেচ দিতে হবে । প্রতি (চারা কাঠি দিয়ে বেঁধে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন ।

চারা রোপণের সময় (Time of planting ) 

সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে সরাসরি জমিতে আর গাছের কাটিং বসানো হয়। জুন মাসে রোপণ ভালো, তবে ঠিকমত যত্ন করলে সারা বছর আঙ্গর চারা লাগানো যায় ।

চারা রোপণ দূরত্ব (Spacing) সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছ পরস্পর ৪ মিটার দূরত্বে চারা রাপেণে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় ।

আঙ্গুর গাছ রোপণের পরবর্তী পরিচর্যা

আগাছা দমন: আড্ডর বাগানে আগাছা দমন একান্ত প্রয়াজন । গাছের গোড়ায় আগাছা জন্মালে তা তুলে ফেলতে হবে । কারণ আগাছা মুল গাছের ক্ষতি করে থাকে এবং খাদ্য গ্রহনে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে ।

বাউনি দেওয়া: আঙ্গুর গাছ যেহেতু একটি লতানো উদ্ভিদ; তাই গাছে বাউনি দেওয়া আবশ্যক । বাউনি (মাচান স্থায়ী হওয়ার প্রয়োজন । টাই- এর পদ্ধতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাউনি দেওয়ার নিম্নোক্ত পদ্ধতিসমূহ বিভিন্ন দেশে প্রচলিত আছে । 

ক) হেড পদ্ধতি: এ পদ্ধতিতে গাছের ডালপালা এমন ভাবে ছাঁটাই করা হয় যাতে গাছ একটি গুল্মের আকৃতি ধারন করে । যে সব জাত প্রশাখার গোড়ার দিকে ফল উৎপন্ন করে এ পদ্ধতি সেগুলোর জন্য উত্তম । বাউনি না দিলে উৎপাদন খরচ কম হয় কিনতু ফলনও সেই সাথে কমে যায় । 

(খ) একটি খুঁটি (Single Stake): বাওয়ার জন্য প্রতি গাছে একটি করে খুটি দেওয়া হয় । লতা বাওয়ার জন্য খুঁটির সাথে সমান্তরালে বাঁশ বা কাঠের লাঠি দেওয়া হয় । 

(গ) কউন পদ্ধতি: এতে গাছের সারি বরাবর কিছু দূরে দূরে শক্ত খুঁটি পুতে তার দিয়ে খুঁটিগুলি সংযুক্ত করে বেড়ার মত কাঠামো তৈরি করা হয়। তার নির্দিষ্ট সংখ্যক শাখা তারের সাথে সমান্তরাল করে বেঁধে দেওয়া হয় । 

(ঘ) বাওয়ার পদ্ধতি: টেকসই বস্তু দিয়ে বিভিন্ন আকারের মাচান বা খিলান (Pergola) তৈরি করে দুই পাশে নির্দিষ্ট দূরত্বে গাছ লাগানো হয় এবং মাচানের উপর ডালপালা দিয়ে লাউ কুমড়া গাছের মত বাইয়ে বাওয়ার সুবিধে করে দেওয়া হয় ।

ছাঁটাই (Pruning)

আঙ্গুর গাছে টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । কারন ছাঁটাই দ্বারা গাছ ফল ধারনে প্রভাবিত হয়। ছাটাই এর পদ্ধতি নির্ভর করে গাছের দৈহিক বৃদ্ধির উপর । যে সব এলাকায় সুস্পষ্ট শীতকাল আছে সেখানে শীতকালে পাতা ঝরে যায় । তখনই ঘটাই করতে হয়। শীতের শেষে নতুন গজানো ডালপালায় ফুল উৎপন্ন হয় । সারা বছর উষ্ণ থাকে এমন স্থানে আঙ্গুরের গাছ পত্র মাচেন করে না । সেই ক্ষেত্রে ফল ধরাতে হলে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে গাছে সুস্তি অবস্থা আনতে হবে। তখন ডালপালা ছাটাই করতে হবে । আঙ্গুরের শাখার প্রতিটি পাতার কক্ষে দুটি করে সুপ্ত কুড়ি থাকে। এর মধ্যে বড়টি বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে পাতা ও ফুল উৎপন্ন করে। ছোটটি কেবল পাতা উৎপন্ন করে ।

যদি সুপ্তিকালে শাখার আগা কেটে ফেলা হয় তাহলে কক্ষের ছোট কুড়িটি বাড়তে শুরু করে এবং এর প্রভাবে বড়টির সুতি ভেঙে যায় এবং তা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে ফুল উৎপন্ন করে। এ ভাবে শীতের প্রভাব ছাড়াও ফল উৎপাদিত হয় । আঙ্গুর গাছ হেঁটে (Pruning) ও সঠিক ভাবে লতিয়ে (Trailing) ফলন বাড়ানো যাবে, গাছ ছাঁটাই করা ছাড়াও সরু ডাল পাতলা করা ও ফল পাতলা করা প্রয়োজন। এতে ফলের আকারও পরিমান বৃদ্ধি পাবে এবং গুণগত মান বাড়বে। গাছে সঠিক পরিমাণ ও নিয়মিত ফলন পেতে মোটা ডালের কিছুটা ছাল তুলে (girdling) দেওয়া হয় ।

সারের উপরি প্রয়োগ ও সেচ ব্যবস্থাপনা

আঙ্গুর গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ আবশ্যক। আঙ্গুর গাছে পটাশ সারের প্রয়োজন খুব বেশি। প্রথম বছর প্রতি গাছে ১০ কেজি জৈব সার, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম সুপার ফসফেট এবং ২৫০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করতে হয় । তারপর প্রতি বছর প্রতি গাছে ৫কেজি জৈব সার, ১০ গ্রাম ইউরিয়া ও সুপার ফসফেট এবং ৩২০ গ্রাম এমপি সার দিতে হয় । ৫ বছরের বেশি বয়সের গাছে ২০ কেজি গোবর সার, ১.৫ কেজি নাইট্রোজেন সার, ৩ কেজি সুপার ফসফেট ও ৪.৫ কেজি এমপি সার প্রয়োজন । গাছ ফল ধরা শুরু করলে সার দেওয়ার সময় পরিবর্তন করতে হবে । শীতকালে ঘটাই করার পর জৈব সার, ফসফেট এবং অর্ধেক নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হবে । বাকি সার গ্রীষ্মকালে ছাটাই এর পর প্রয়োগ করতে হবে ।

সেচ (Irrigation): গাছের বৃদ্ধি ও কাঙিক্ষত ফল ধরার জন্য গাছের গোড়ায় রস থাকা দরকার। গাছের গোড়ায় ৮ সে:মি: গভীর সেচের পানি অবশ্যই প্রয়োজন। গাছ ছাটাইয়ের পর গ্রীষ্মকালে সেচ দরকার। সার প্রয়োগের পর কিংবা ফল বৃদ্ধির সময় সেচ দিতে হয়। বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে মাটি ও আবহাওয়া অনুযায়ী ১৫-২০ দিন অন্তর সেচের প্রয়োজন ।

পোকামাকড় ও রোগ বালাই দমন কৌশল

বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও রোগ দ্বারা আঙ্গুর গাছ আক্রান্ত হয়ে থাক । রোগ ও পোকা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে । মাজরা পাকা গাছের প্রধান শাখার ত্বকভেদ করে কাণ্ডের মধ্যে প্রবেশ করে এবং কাণ্ডের মধ্যে বসবাস করে ক্রমাগত গাছের ছাল খেয়ে ফেলে। অধিক আক্রমণে আক্রান্ত শাখাগুলো শুকিয়ে যায়। আলকাতরার সাহায্যে গর্তের ফুটগুলো বন্ধ করে এই পোকা দমন করা যায় ।

ক্লী বিটল: শুককীট ও পূর্ণাঙ্গ পোকাগুলো আঙ্গুর গাছের নরম পাতা এবং শাখাসহ মুকুল গুলো খেয়ে ফেলে ও গাছের বৃদ্ধি রহিত করে। প্রতিকারের জন্য আক্রমণের শুরুতে ৫০% মিথাইল প্যারালিয়ন স্প্রে করে এদের সহজে দমন করা যায় ।

মাকড়, আঁশ পোকা, জেসিড, থ্রিপস: রস শোষক পোকাগুলো দলবদ্ধ ভাবে আঙ্গুর গাছের পাতা, শাখা, মুকুল ইত্যাদির রস শাষেন করে । এর ফলে গাছ বিবর্ন হয়ে বৃদ্ধি রহিত হয় । প্রতিকারের জন্য রগর ৩০ ইসি আক্রান্ত গাছে রোদর দিনে স্প্রে করতে হবে ।

অ্যানথ্রাকনোজ: এ রোগের আক্রমণে গাছের শাখার ডগায়, ফুলেও ফলে বাদামি রঙের গালে ছাপ পড়ে । সেগুলোর কিনারা কালচে দেখায় । এই অংশগুলো শুকিয়ে যায় এবং পাতা ঝরে পড়ে। ফুল আক্রান্ত হলে ফল ধরে না । আবার ফল আক্রান্ত হলে ফেটে যায় । ডাল ছাঁটাই এর পর বার্দোমিশ্রন ছিটালে উপকার পাওয়া যায়।

ডাউনি মিলডিউ: এ রোগের আক্রমণে আঙ্গরের ভীষণ ক্ষতি হয়। আক্রান্ত হওয়ার পরেই রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে । আক্রান্ত পাতায় রোগ বেশি দেখা যায়। আক্রান্ত পাতার উপরে সবুজ ছাপে এবং নিচে সাদা সাদা গুড়ো দেখা যায় । এগুলো ঘষলে উঠে যায় । আর্দ্রতা বেশি হলে রোগটি বেড়ে যায় । কচি পাতায় আক্রমণ বেশি হয় । বোর্দো মিশ্রন স্প্রে করে এদের দমন করা যায় ।

ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কৌশল

বাংলাদেশে শীতের শেষে ফুল আসে এবং জুন-আগস্ট মাসে ফল পাকে। এই সময় বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় ফল মিষ্টি হয় না। রোগ ও পোকার আক্রমনে ফল নষ্ট হয়। ফলে তালোর নিয়ম হলো গাছের ফল নাড়া দিলে ২/১ টা ফল পড়ে যায় । সেই সময় গুচ্ছটি কাচির সাহায্যে কেটে নিতে হবে । গুচ্ছ গুলো একই সঙ্গে না পাকায় ফল সংগ্রহ কয়েক দিন ধরে চলে। জাত ও স্থানের উপর ফলন নির্ভর করে। হেক্টর প্রতি ফলন ২০-২৫ টন পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে । ফল পাকার সহজ লক্ষণ হলো । ফলের গায়ের সাদা আবরণ ধীরে ধীরে মিশে যায় এবং চকচকে দেখা যায় ।

ফল সংরক্ষণ (Fruit preservation): জাত অনুসারে হিমাগারে ০° সে থেকে ২০ সে: তাপমাত্রায় ৮৫-৯০% আর্দ্রতায় ৪-৬ সপ্তাহ রাখা যায়। গাছ হতে ফল সংগ্রহের পর ঠিকমত গুদামজাত করলে ১৫-৪০ ভাগ ফল নষ্ট হয় । এই অপচয় বন্ধ করতে গাছ থেকে ফল পাড়ার ৪ দিন পূর্বে ফলের গায়ে ০.২ শতাংশ ক্যাপটেন প্রে করতে হবে।

 

লটকন (Latkan) চাষাবাদ কৌশল

এটা বাংলাদেশের একটি বুনো ফল। এদেশে লটকা বা লটকন নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে এটি লটকা বা নটকা ফল নামে পরিচিত। তবে জানা গেছে যে চীন দেশেও এ ফলটির চাষাবাদ রয়েছে এবং সেখানেও এ ফলটি লটকা নামেই পরিচিত। ছোট গালাকার ফলের ভিতরে থাকে অম্ল মধুর শাস । শাসের মধ্যভাগে তিন চারটি মাংসাল বড় বীজ থাকে এবং খেতে খুবই সুস্বাদু। লটকন খুব কম গুরুত্বপূর্ণ ফল হওয়ায় এই ফলের চাষের বিকাশে কোন বৈজ্ঞানিক গবেষনা করা হয় নাই। ঢাকার আশেপাশে গাজীপুর, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, কিশারেগঞ্জ, টাঙ্গাইল এলাকায় এর চাষ বেশি হয় । বাংলাদেশের আর্দ্র আবহাওয়ায় দেশের সর্বত্রই এই ফল চাষের সুযোগ রয়েছে । ফলটির নতুন জাত উদ্ভাবন এবং উন্নতির দিকে লক্ষ্য দিলে ভবিষ্যতে জনপ্রিয় ফল হিসাবে বিস্তার লাভ করার সুযোগ রয়েছে।

মাটি ও জমি নির্বাচন

লটকন গাছ যে কোন মাটিতে হতে পারে । তবে উঁচু বা মাঝারি উঁচু সুনিষ্কাশন ব্যবস্থাযুক্ত উর্বর বেলে দোআশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী । এই গাছের অম্লমাটি সহনশীল ক্ষমতা রয়েছে । গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না । রৌদ্রো উজ্জল উন্মুক্ত জায়গায় বা আংশিক ছায়াযুক্ত জায়গায়ও লটকনের চাষ করা যায় ।

গাছ রোপণের জন্য জমি তৈরি, গর্ত তৈরি ও সার প্রয়োগ

চারা রোপণের আগে জমি ভালো ভাবে চাষ দিয়ে আগাছা পরিষ্কার ও অসমতল জমি সমতল করে নিতে হবে । জমি প্রস্তুত হলে চারা লাগানোর স্থানগুলো কাঠি পুতে চিহ্নিত করতে হবে । গাছ বসানোর একমাস আগে থেকে নির্দিষ্ট আকারের গর্ত তৈরি করে নিতে হবে। প্রতি গর্তের মাপ হবে ৬০ সে:মি: ৬০ সে:মি:×৬০ সে:মি: । প্রতি গর্তে ঝুরঝুরে মাটির সঙ্গে ১৫-২০ কেজি গোবর সার, ২কেজি কাঠের ছাই, ৫০০ গ্রাম হাঁড়ের গুড়া মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে ফেলে রাখতে হবে 

চারা রোপণ পদ্ধতি (Method of planting )

গর্তের মাঝখানে চারা বসিয়ে সেচ দিতে হবে। গোড়ার মাটি একটু উঁচু করে দিতে হবে। চারা রোপণের পর বাঁশের ঠেকনা দেওয়া দরকার হয়। ৩০ সে:মি: লম্বা চারা রোপণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।

চারা রোপণের সময় (Time of planting)

বর্ষাকাল জুলাই-আগষ্ট মাসে চারা রোপণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় । এর আগে বা পরে চারা রোপণ করা যায় । তবে সে জন্য সেচের ব্যবস্থা থাকতে হবে। অর্থাৎ সেচের ব্যবস্থা থাকলে সারা বছরই চারা রোপণ করা যায়।

রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা

উপরি সার প্রয়োগ: এই ফলের গাছের সারের বিশেষ চাহিদা নেই । ভালো ফলনের জন্য এবং চারা সতেজ করার জন্য সার প্রয়োগ প্রয়োজন । বর্ষার আগে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিয়ে গাছ প্রতি ১৫ কেজি গোবর সার, ২ কেজি কাঠের ছাই, ২০০ গ্রাম হাড় গুড়া, তার সঙ্গে ১০০ গ্রাম এনপিকে (১০:২৬:২৬) মিশিয়ে দিতে হবে । এর পর পর সেচ দিতে হবে। ফলন্ত বড় গাছের জন্য প্রতি বছর ফুল আসার আগে ২০ কেজি গোবর সার ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম ফসফরাস ও ১০০ গ্রাম পটাশ গোড়ার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

সেচ: গোড়ার মাটিতে সব সময় উপযুক্ত রস থাকা প্রয়োজন। চারা ছোট অবস্থায়, গরমের সময়ে ও সার প্রয়োগের পর সেচ দেওয়া প্রয়োজন ।

ডাল পালা ও ফল ছাঁটাই: শুকনা রোগাক্রান্ত ও দুর্বল ডালপালা কেটে দেওয়া ছাড়া তেমন যত্নের প্রয়োজন হয় না । বেশি ফল ধরলে ফলের থাকো থেকে কিছু ফল ছিড়ে হালকা করে দিলে অবশিষ্ট ফলের আকৃতি বড় হবে । গাছের নিচে সাথি ফসল চাষে অসুবিধা আছে কারণ লটকন গাছ বেশ ঝাপালো ধরনের হয়ে থাকে ।

পোকা মাকড় ও রোগ বালাই দমন

লটকন শক্ত ধরনের গাছ। এ গাছে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয় । মাঝে মাঝে পাতা খাওয়া পোকার আক্রমণ হয় । এ পোকা দমনে বি এইচ সি ৫০% গুড়ো, পানিতে গুলে ছিটালো উপকার পাওয়া যায় ।

ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ

আগস্ট মাসে ফল পাকে। ফলের থোকায় রং ধরা শুরু করলে থাকো সমেত ফল পেড়ে ঝুড়িতে রাখা হয় । ঘরের গরম জায়গায় ফল রাখলে পেকে যায়। ফলের গায়ে আঘাত বা ঘষা লাগলে খোসার গায়ে কালচে দাগ পড়ে । ফলের মান কমে যায়। বীজের গাছ ৬-৭ বছর থেকে ও কলমের গাছ ৩-৪ বছর থেকে ফল দেয়া শুরু করে । ৮-১০ বছরের ভালো গাছ থেকে ২০০-২৫০ কেজি ফল পাওয়া যায় ।

ফল সংরক্ষণ ও আলো বাতাস চলাচল করে এমন শুকনো স্থানে মাচানের উপর রাখলে অল্প সময়ের মধ্যে সংরক্ষণ করা যায় ।

Content added || updated By

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১। আঙ্গুরের কয়েকটি জাতের নাম লেখ ? 

২। এক বছর বয়স্ক আঙ্গুর গাছে কয়টি মুকুল রেখে বাকিগুলো হেঁটে দিতে হয় ? 

৩। আঙ্গুর গাছে অ্যানথ্রাকনোজ রোগ দমনে কি ব্যবস্থা নেয়া হয় ? 

৪। আঙ্গুরের রস শোষক পোকা দমনে ব্যবহার যোগ্য কীটনাশকের নাম লেখ । 

৫ । লটকন গাছ রোপণের উপযুক্ত সময় কখন (মাসের নাম) ? 

৬। ফলন্ত লটকন গাছে প্রতিবছর কী পরিমাণ গোবর, টিএপি এবং এমওপি সার প্রয়োগ করা দরকার ? 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১। লটকনের জমি ও মাটি নির্বাচন এবং গর্ত তৈরি সম্পর্কে লেখ । 

২। লটকনের অন্তর্বর্তী পরিচর্যা সম্পর্কে লেখ । 

৩। আঙ্গুর সংগ্রহ ফল সম্পর্কে লেখ । 

৪ । আঙ্গুরের জাতসমূহ লিপিবদ্ধ কর । 

রচনামূলক প্রশ্ন 

১। আঙ্গুরের জমি ও মাটি নির্বাচন জমি তৈরি এবং চারা রোপণ কৌশল বর্ণনা করা 

২। আঙ্গুর চাষে বাউনি দেওয়া ও ঘটাই সম্পর্কে বর্ণনা কর । 

৩। আঙ্গুর গাছে সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা সম্পর্কে লেখ । 

৪ । লটকনের চাষাবাদ কৌশল বর্ণনা কর । 

৫। আঙ্গুরের পোকা মাকড় ও রোগ বালাই দমন কৌশল সম্পর্কে লেখ ।

Content added By